Regions - Middle East

ইরান ট্র্যাপঃ মার্কিন সাম্রাজ্যের শেষ চাল

দশকব্যাপী মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ। অনেক বছর ধরে এটি কেবল নীতিনির্ধারকদের গোলটেবিল আলোচনায়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে কিংবা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের কল্পিত "worst case scenario"-তে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেই আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিতে আমরা দেখে ফেলেছি। ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছে যে যেকোনো মূল্যে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যদিকে ইরানও সমানভাবে প্রতিজ্ঞ যে, বহিরাগত চাপকে প্রতিহত করে এবং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখবে।এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্বস্তিকর দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। একদিকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত মিত্র ইসরায়েল, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ওয়াশিংটন যুদ্ধ চায় না, কিন্তু তার জোট, ঘাঁটি, নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্নে এমন এক ফাঁদে আটকে পড়ছে যেখানে বাইরে থাকা প্রায় অসম্ভব।

লেখক Hosnain R. Sunny
সময় ০৯/০৯/২৫ ২৩:০২:২৯
Facebook LinkedIn X (Twitter) WhatsApp Share
সারাংশ

দশকব্যাপী মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ। অনেক বছর ধরে এটি কেবল নীতিনির্ধারকদের গোলটেবিল আলোচনায়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে কিংবা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের কল্পিত "worst case scenario"-তে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেই আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিতে আমরা দেখে ফেলেছি। ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছে যে যেকোনো মূল্যে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যদিকে ইরানও সমানভাবে প্রতিজ্ঞ যে, বহিরাগত চাপকে প্রতিহত করে এবং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখবে।এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্বস্তিকর দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। একদিকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত মিত্র ইসরায়েল, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ওয়াশিংটন যুদ্ধ চায় না, কিন্তু তার জোট, ঘাঁটি, নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্নে এমন এক ফাঁদে আটকে পড়ছে যেখানে বাইরে থাকা প্রায় অসম্ভব।

একটি ১২ দিনের যুদ্ধ


দশকব্যাপী মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ। অনেক বছর ধরে এটি কেবল নীতিনির্ধারকদের গোলটেবিল আলোচনায়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে কিংবা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের কল্পিত "worst case scenario"-তে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেই আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিতে আমরা দেখে ফেলেছি। ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছে যে যেকোনো মূল্যে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যদিকে ইরানও সমানভাবে প্রতিজ্ঞ যে, বহিরাগত চাপকে প্রতিহত করে এবং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখবে।


এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্বস্তিকর দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। একদিকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত মিত্র ইসরায়েল, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ওয়াশিংটন যুদ্ধ চায় না, কিন্তু তার জোট, ঘাঁটি, নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্নে এমন এক ফাঁদে আটকে পড়ছে যেখানে বাইরে থাকা প্রায় অসম্ভব।


বিপদের আরেকটি দিক হলো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বর্তমান ভঙ্গুরতা। বিশ্ব আজ বিভক্ত—একদিকে পশ্চিমা শক্তি, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন। মধ্যপ্রাচ্য প্রক্সি সংঘাতে ছিন্নভিন্ন, আর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও বিদেশি যুদ্ধের ক্লান্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ফলে ইরান–ইসরায়েল সরাসরি সংঘাত কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্যও একটি বড় হুমকি।


ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: চল্লিশ বছরের বৈরিতা


ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শত্রুতার মূল সূত্রপাত ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর পশ্চিমাপন্থী রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ইরান পরিণত হয় একটি ধর্মতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে। আয়াতুল্লাহ খোমেইনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে "শয়তান" এবং ইসরায়েলকে "একটি ক্যান্সারাস টিউমার" আখ্যা দেন।


এর আগে শাহ শাসিত ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক উষ্ণ ছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর থেকে তেহরান ইসরায়েলবিরোধী শক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। ইসরায়েলও ইরানকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা শুরু করে।


১৯৮০-এর দশকে ইরান–ইরাক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিছু কৌশলগত কারণে ইসরায়েল গোপনে ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল, যা পরে "ইরান–কনট্রা" কেলেঙ্কারিতে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। তবে সেই ক্ষণস্থায়ী সহযোগিতা দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতাকে প্রশমিত করতে পারেনি।

১৯৯০-এর দশক থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইসরায়েলের জন্য "লাল রেখা" হয়ে দাঁড়ায়। ইয়িৎসহাক রবিন থেকে শুরু করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পর্যন্ত প্রতিটি ইসরায়েলি নেতা সতর্ক করে দেন যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে সেটি হবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। ইসরায়েল "Never Again" নীতি যা হলোকাস্ট পরবর্তী ইসরায়েলের আত্মপরিচয়ের একটি অংশ এই অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে।

অন্যদিকে ইরান সরাসরি যুদ্ধ না করে প্রক্সি শক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করে। লেবাননে হিজবুল্লাহ, গাজায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ, ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহী সবাই তেহরানের কৌশলগত ছায়াতলে গড়ে ওঠে।


এখানে যুক্তরাষ্ট্র ছিল তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। ১৯৮০ সালের কার্টার ডকট্রিন ঘোষণা করে যে পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা মার্কিন জাতীয় স্বার্থের অংশ। এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইসরায়েলকে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়, অন্যদিকে উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোকেও সুরক্ষা প্রদান করে। এর ফলে ওয়াশিংটন ইরান–ইসরায়েল প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে এসে দাঁড়ায়।


<img src ='https://cms.thepapyrusbd.com/public/storage/inside-article-image/eyzdx8tqz.jpg'>


সাম্প্রতিক উত্তেজনা: Operation Midnight Hammer


২০২৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে "অপারেশন মিডনাইট হ্যামার" চালায়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে আঘাত হানা। এই পদক্ষেপকে তেহরান সরাসরি আগ্রাসন হিসেবে দেখে এবং প্রতিক্রিয়ায় কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে রকেট বর্ষণ করে, আর ইয়েমেনের হুথিরা তেল আবিব লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়।


এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যকে সরাসরি যুদ্ধের দোরগোড়ায় নিয়ে আসে। ইরান বিশ্বশক্তির সঙ্গে চলমান পরমাণু আলোচনা স্থগিত করে, আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল "কৌশলগত সাফল্য" দাবি করলেও উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। ইতিহাসে দেখা গেছে, একবার সামরিক হামলা শুরু হলে de-escalation ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠে যেমন ২০০৬ সালের ইসরায়েল–হিজবুল্লাহ যুদ্ধ।


ইরানের প্রক্সি কৌশল


ইরানের সামরিক শক্তি মূলত "অসম যুদ্ধ" (asymmetric warfare)-এর উপর নির্ভরশীল। কারণ ইসরায়েলের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সম্ভবত গোপন পারমাণবিক ভাণ্ডার রয়েছে। তাই সরাসরি মোকাবিলায় জেতা ইরানের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই কারণে ইরান চার দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে প্রক্সি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।


হিজবুল্লাহ যাদের হাতে এক লক্ষেরও বেশি রকেট লেবাননে একটি রাষ্ট্রের মতোই শক্তিশালী। গাজায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের দক্ষিণ ফ্রন্টকে অস্থির রাখে। ইরাকের শিয়া মিলিশিয়ারা মার্কিন ঘাঁটিকে টার্গেট করে। হুথিরা সৌদি আরব ও ইসরায়েল উভয়কেই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হুমকি দেয়।


এই প্রক্সি নেটওয়ার্ক ইতিহাসের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল যখন লেবানন আক্রমণ করে, তখন থেকেই ইরান হিজবুল্লাহকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। ২০০৬ সালের যুদ্ধে হিজবুল্লাহর অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ ইসরায়েলকে বিস্মিত করেছিল। সেখান থেকেই ইরানের কৌশলগত আস্থা বৃদ্ধি পায় যে প্রক্সি শক্তি ব্যবহার করেই আঞ্চলিক ভারসাম্য পরিবর্তন করা সম্ভব।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন বাইরে থাকতে পারবে না


যদিও আমেরিকান জনগণ ইরাক ও আফগানিস্তানের দীর্ঘ যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে ক্লান্ত, তবুও ইরান–ইসরায়েল সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাইরে থাকা প্রায় অসম্ভব।


প্রথমত, ইসরায়েলের নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি নীতি। দ্বিতীয়ত, পারস্য উপসাগরে মার্কিন ঘাঁটি ও হাজার হাজার সেনা রয়েছে, যাদের ওপর হামলা হলে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হবে। তৃতীয়ত, জ্বালানি নিরাপত্তা। ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে বৈশ্বিক তেলের দাম আকাশছোঁয়া হবে। চতুর্থত, বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের (রাশিয়া, চীন) কাছে মার্কিন প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল প্রমাণিত হলে তার প্রভাব পুরো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় পড়বে।এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একপ্রকার "অবশ্যই জড়িয়ে পড়তে হবে" এমন অবস্থায় রয়েছে যেমন ১৯৯১ সালের কুয়েত সংকটে দেখা গিয়েছিল।


আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া: নতুন জোটের মানচিত্র


ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধ কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো ইরানের বিরোধী হলেও, প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন করতে ভয় পাবে অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে। তুরস্ক নিজের স্বার্থে একদিকে মধ্যস্থতাকারী, অন্যদিকে আঞ্চলিক ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা করবে।

রাশিয়া সিরিয়ায় সেনা উপস্থিতির কারণে ইরানের সাথে কৌশলগতভাবে জড়িত। চীন ইরানের সবচেয়ে বড় তেল গ্রাহক, তাই তারা যুদ্ধ বন্ধে চাপ দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করবে। ইউরোপ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কূটনৈতিক সমাধানের জন্য মরিয়া থাকবে।

ইতিহাস দেখায়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি বড় যুদ্ধ বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে টেনে আনে। ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকটে যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় হয়েছিল, তেমনি বর্তমান যুদ্ধও বৈশ্বিক রাজনীতিকে নতুন করে সাজাবে।


পারমাণবিক ঝুঁকি


সবচেয়ে বড় ভয় হলো পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসার। ইরান যদি মনে করে তার শাসন টিকে থাকার ঝুঁকিতে রয়েছে, তবে সে গোপনে কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নিতে পারে। ইসরায়েল হয়তো তখন নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথাও ভাবতে পারে। এই পরিস্থিতি ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের মতো বৈশ্বিক আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। তাছাড়া যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশরও একই পথে হাঁটতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবে।


<img src ='https://cms.thepapyrusbd.com/public/storage/inside-article-image/cbdqws2el.jpg'>


অর্থনৈতিক পরিণতি: তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈশ্বিক অস্থিরতা


ইরান–ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১৯৭৩ সালের তেল সংকটের মতো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে। শিপিং লেনগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে, বীমার খরচ বাড়বে, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।



নীতিগত সুপারিশ: শান্তির একমাত্র পথ কূটনীতি


শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কেবল সামরিক শক্তি নয়, কূটনৈতিক প্রজ্ঞা অপরিহার্য। ইতিহাসে কেম্প ডেভিড চুক্তি কিংবা ইরান পরমাণু চুক্তি (JCPOA)-র অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে—যুদ্ধ নয়, আলোচনাই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।

প্রথমত, গোপন backchannel আলোচনা চালু রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণযোগ্য নয়, তবে একই সাথে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে কিছু প্রণোদনাও দিতে হবে। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক বাজার রক্ষায় সমন্বিত কৌশল নিতে হবে। এবং সবশেষে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংলাপ শুরু করতে হবে যেখানে ইরান, ইসরায়েল, সৌদি, তুরস্ক ও মিশর সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে।


একবিংশ শতাব্দীর মহাশক্তির ফাঁদ


ইরান–ইসরায়েল সংঘাত কোনো স্থানীয় যুদ্ধ নয়। এটি একটি "গ্রেট পাওয়ার ট্র্যাপ", যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে টেনে আনতে পারে। ১৯১৪ সালে বলকান থেকে শুরু হওয়া এক হত্যাকাণ্ড যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিয়েছিল, আজকের মধ্যপ্রাচ্যও তেমন এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গে পরিণত হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ হলো—এই যুদ্ধকে ঠেকানো এবং মহাশক্তির ফাঁদে না পড়া। এর জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি, আঞ্চলিক সংলাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য দূরদর্শী পরিকল্পনা। অন্যথায় মধ্যপ্রাচ্যের আগুন গোটা বিশ্বকে গ্রাস করতে পারে।

লেখক
Hosnain R. Sunny Graduated from The London School of Economics and Social Sciences (LSE) in Politics and Economics and a Professional Accountant with more than Twelve (12) Years of Industry Experience including Ernst and Young, Grant Thornton etc. He is the Managing Editor of Country's first Philosophical and Political Economy Magazine ''The Papyrus''. Dhaka, Bangladesh

Comments