প্রতি বছর ন্যায় এবারো ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার বার্ষিকী শেষ হলো। এরই সুবাদে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নানা পর্যালোচনা সামনে আসে। সেসব বিশ্লেষণ সাধারণত আফগানিস্তান ও ইরাককে ঘিরেই আবর্তিত হয়।এটিই স্বাভাবিক। তবে আমি এক ভিন্নতর বিশ্লেষণ দিতে চাই। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বড় পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থতা মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বরং রাশিয়ায় ঘটেছিল। টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনের ধ্বংসস্তূপ তখনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, সেই সময়েই আমেরিকার নেতৃত্ব রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ নেয়।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি হঠাৎই অস্থির হয়ে ওঠে, যখন একাধিক রাশিয়ান ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। পোল্যান্ডের সামরিক বাহিনী জানায়, এক রাতের মধ্যে প্রায় উনিশ থেকে তেইশটি ড্রোন সীমান্ত অতিক্রম করে, যাদের মধ্যে কয়েকটি গুলি করে ভূপাতিত করা হলেও বেশ কয়েকটি অনায়াসে তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে ন্যাটোর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পোল্যান্ড বাধ্য হয় ন্যাটোর ধারা ৪ কার্যকর করে জরুরি পরামর্শ সভার ডাক দিতে। এটি শুধু একটি সামরিক অনুপ্রবেশ নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপরও এক গভীর ছায়া ফেলেছে, কারণ এটি স্পষ্টতই রাশিয়ার একটি উদ্দেশ্যমূলক সংকেত, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
আলাস্কায় এক অনন্য দৃশ্যপট তৈরি হয়েছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লাল কার্পেটে হাঁটলেন, করমর্দন করলেন এবং তাঁর মার্কিন সমকক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাসি বিনিময় করলেন। বৈঠকের শেষে ট্রাম্প উচ্ছ্বসিতভাবে সম্পর্কের প্রশংসা করলেন এবং রাশিয়াকে “বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তি” বলে অভিহিত করলেন। যদিও তিনি স্বীকার করলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কোনো চুক্তি হয়নি।তবে মস্কো সময় অনুযায়ী শনিবার সকালে এক নতুন ইঙ্গিত পাওয়া গেল। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিরতিকে শান্তির পথে ধাপ হিসেবে তুলে ধরলেও ট্রাম্প হঠাৎ করে সেই পথ থেকে সরে এসে সরাসরি “শান্তি চুক্তি”-র কথা বলতে শুরু করলেন। এই অবস্থান দীর্ঘদিনের ক্রেমলিনের কৌশলের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। রাশিয়াকে যুদ্ধ চালিয়ে গেলে যে “গুরুতর পরিণতি”র হুঁশিয়ারি তিনি দিয়েছিলেন, তার কোনো বাস্তব চিত্র দেখা যায়নি। এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিল।