দীর্ঘদিনের একনায়ক বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীদের আক্রমণে উৎখাতের নয় মাস পর, সিরিয়া একগুচ্ছ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটি, যা বর্তমানে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছে, সেখানে বারবার সহিংস সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, সিরিয়ার ভেতরে ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলা, এবং নতুন সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির একটি: ইসলামিক স্টেট বা আইএসআইএস-এর পুনরুত্থান।২০২৪ সালে আসাদ শাসন উৎখাত হওয়ার পর থেকে, আইএসআইএস সারা সিরিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে, যেখানে নতুন সিরীয় সরকার ছাড়াও খ্রিস্টান, শিয়া এবং কুর্দি সংখ্যালঘুরা তাদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।
প্রতি বছর ন্যায় এবারো ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার বার্ষিকী শেষ হলো। এরই সুবাদে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নানা পর্যালোচনা সামনে আসে। সেসব বিশ্লেষণ সাধারণত আফগানিস্তান ও ইরাককে ঘিরেই আবর্তিত হয়।এটিই স্বাভাবিক। তবে আমি এক ভিন্নতর বিশ্লেষণ দিতে চাই। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বড় পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থতা মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বরং রাশিয়ায় ঘটেছিল। টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনের ধ্বংসস্তূপ তখনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, সেই সময়েই আমেরিকার নেতৃত্ব রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ নেয়।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি হঠাৎই অস্থির হয়ে ওঠে, যখন একাধিক রাশিয়ান ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। পোল্যান্ডের সামরিক বাহিনী জানায়, এক রাতের মধ্যে প্রায় উনিশ থেকে তেইশটি ড্রোন সীমান্ত অতিক্রম করে, যাদের মধ্যে কয়েকটি গুলি করে ভূপাতিত করা হলেও বেশ কয়েকটি অনায়াসে তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে ন্যাটোর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পোল্যান্ড বাধ্য হয় ন্যাটোর ধারা ৪ কার্যকর করে জরুরি পরামর্শ সভার ডাক দিতে। এটি শুধু একটি সামরিক অনুপ্রবেশ নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপরও এক গভীর ছায়া ফেলেছে, কারণ এটি স্পষ্টতই রাশিয়ার একটি উদ্দেশ্যমূলক সংকেত, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
আলাস্কায় এক অনন্য দৃশ্যপট তৈরি হয়েছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লাল কার্পেটে হাঁটলেন, করমর্দন করলেন এবং তাঁর মার্কিন সমকক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাসি বিনিময় করলেন। বৈঠকের শেষে ট্রাম্প উচ্ছ্বসিতভাবে সম্পর্কের প্রশংসা করলেন এবং রাশিয়াকে “বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তি” বলে অভিহিত করলেন। যদিও তিনি স্বীকার করলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কোনো চুক্তি হয়নি।তবে মস্কো সময় অনুযায়ী শনিবার সকালে এক নতুন ইঙ্গিত পাওয়া গেল। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিরতিকে শান্তির পথে ধাপ হিসেবে তুলে ধরলেও ট্রাম্প হঠাৎ করে সেই পথ থেকে সরে এসে সরাসরি “শান্তি চুক্তি”-র কথা বলতে শুরু করলেন। এই অবস্থান দীর্ঘদিনের ক্রেমলিনের কৌশলের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। রাশিয়াকে যুদ্ধ চালিয়ে গেলে যে “গুরুতর পরিণতি”র হুঁশিয়ারি তিনি দিয়েছিলেন, তার কোনো বাস্তব চিত্র দেখা যায়নি। এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিল।
কাশ্মীরের পাহালগামে মারাত্মক জঙ্গি হামলায় ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে, উভয় পক্ষই নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গোলাগুলি বিনিময় করেছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করেছে। ৬ মে ভারত "অপারেশন সিন্দুর" শুরু করার ঘোষণা করেছে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নয়টি স্থানে হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে, যেগুলি হামলার পরিকল্পনার জন্য ব্যবহৃত হত বলে দাবি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি বৃহত্তর সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে, যা ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দ্বিপাক্ষিক মুখোমুখি অবস্থান।
ঠান্ডা মাথার মানুষেরা এখনও জয়ী হতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি সম্ভবত নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে আরও সতর্কভাবে কাজ করতে বাধ্য করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কিনারা থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক জোরদার এবং অভিন্ন চীনা হুমকি মোকাবেলার উপর মনোযোগ দিতে রাজি করাতে পারে। চীনও সম্ভবত ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ............
অন্যদিকে, পুতিন মনে করছেন সময় তাঁর পক্ষেই কাজ করছে। ভারী ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে, এবং পুতিন সামান্য অঞ্চল জয়ের জন্য একের পর এক সৈন্য পাঠাতে কোনো সংকোচবোধ করছেন না। ইউক্রেনকে রাশিয়ার অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করার তাঁর অভিপ্রায় এখনো অপরিবর্তিত।যুক্তরাষ্ট্র যদি একটি ন্যায্য শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে প্রথম পদক্ষেপ হবে পুতিনকে তাঁর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসার জন্য একটি শক্তিশালী প্রণোদনা দেওয়া। এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো তাঁর ধারণা পাল্টানো যে সময় তাঁর পক্ষে কাজ করছে—এর জন্য নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করতে হবে এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট ত্বরান্বিত করতে হবে।