প্রতি বছর ন্যায় এবারো ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার বার্ষিকী শেষ হলো। এরই সুবাদে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নানা পর্যালোচনা সামনে আসে। সেসব বিশ্লেষণ সাধারণত আফগানিস্তান ও ইরাককে ঘিরেই আবর্তিত হয়।
এটিই স্বাভাবিক। তবে আমি এক ভিন্নতর বিশ্লেষণ দিতে চাই। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বড় পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থতা মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বরং রাশিয়ায় ঘটেছিল। টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনের ধ্বংসস্তূপ তখনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, সেই সময়েই আমেরিকার নেতৃত্ব রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ নেয়। সেসব ভুলের মর্মান্তিক প্রতিধ্বনি আজও শোনা যায়। গত সপ্তাহেই রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা চালিয়েছে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে। ন্যাটোর ভূখণ্ডে আবারও অনধিকার প্রবেশ করেছে রাশিয়া, ড্রোন উড়িয়ে পাঠিয়েছে পোল্যান্ডের আকাশসীমায়। আল-কায়েদার আমেরিকা আক্রমণের সময়টা ছিল ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনের প্রথম দিককার দিকে। অল্প কিছু বছর আগেও তিনি রাশিয়ায় একেবারেই অচেনা ছিলেন, আর পশ্চিমা বিশ্বে ছিলেন বেশ অজানা।
হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শুভেচ্ছা কুড়ালেন পুতিন—কারণ শোনা যায়, টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে তিনিই জর্জ ডব্লিউ. বুশকে ফোন করেছিলেন। এটি এক সুবিধাজনক পোস্ট-সোভিয়েত গল্পে রূপ নেয়। আমেরিকার দুঃসময়ে রুশ নেতা-ই প্রথম হাত বাড়িয়েছিলেন।
পুতিন বুশকে বলেছিলেন, রাশিয়া সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার মিত্র। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়া যেমন ইসলামি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ছে, যুক্তরাষ্ট্রও তেমনি আফগানিস্তানে লড়াই করছে।
বুশ আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর সঙ্গে গোয়েন্দা সহযোগিতা বাড়ালো, যৌথ সামরিক মহড়া শুরু হলো। বুশ যখন উত্তর কোরিয়া, ইরান ও ইরাককে "অক্ষশক্তি" হিসেবে আখ্যা দিলেন, তখন রাশিয়ার নাম সেখান থেকে বাদ পড়ল ; যদিও রাশিয়া ওই তিন দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছিল। বরং বুশ পুতিন ও রাশিয়ার প্রশংসাতেই ব্যস্ত রইলেন।
২০০২ সালের জি৮ শীর্ষ সম্মেলনে বুশ বলেছিলেন:
আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে একজন মিত্র হিসেবে দেখি, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে এক শক্তিশালী মিত্র।
আমেরিকার ৪৩তম প্রেসিডেন্ট প্রায়ই এমন প্রশংসাবাক্য পুতিনের জন্য পুনরাবৃত্তি করতেন। কিন্তু যথারীতি, ৯/১১ পরবর্তী সময়ে বুশের সঙ্গে আচরণে পুতিনের ভেতরে অন্য উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল।
যেখানে চেচেন বিদ্রোহীদের মধ্যে ইসলামি চরমপন্থীরা ছিল, পুতিন তাদের ক্ষমতায়ন করেছিলেন এই শর্তে যে তারা যেন রুশ সাম্রাজ্যের ভেতরে অনুগত থাকে।
চেচনিয়ার প্রধান মুফতি আখমাত কাদিরভ ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। এক দশক পরে, পুতিন তাকেই চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বসালেন। আজ আখমাতের ছেলে রমজান কাদিরভ চেচনিয়ায় পুতিনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ভৃত্য। কাদিরভসি হলো ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে নির্মম আঘাতকারী বাহিনী। চেচেনিয়ার কঠোর ইসলামি সমাজে এখন এলজিবিটিকিউ অধিকার এমন পর্যায়ে নেমে গেছে যে তা গভীরভাবে সমকামবিদ্বেষী রাশিয়ার বাকি অংশের চেয়েও ভয়াবহ।
এর কারণ হলো, রাশিয়ার যুদ্ধ কখনোই সন্ত্রাসবাদ বা ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে ছিল না। ছিল ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। আর ৯/১১-পরবর্তী আমেরিকান অনুমোদন সে যুদ্ধকে বৈধতা দিয়েছিল।
এরপর থেকে পুতিন ক্রমেই আরও বিস্তৃত অর্থে "সন্ত্রাসবাদ" শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করেন; যাতে শাসকবিরোধী যেকোনো কণ্ঠকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পেছন ফিরে তাকালে, ৯/১১-পরবর্তী সময়ে রাশিয়াকে ঘিরে বুশের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করা সহজ। সত্যিই, সমালোচনার অনেক কারণ রয়েছে। তবে বুশকে ঘটনাবলি ভাসিয়ে নিয়েছিল, আর পুতিন তুলনামূলক অজ্ঞাত পরিচয়ের কারণে সুবিধা পেয়েছিলেন। আরও অবিশ্বাস্য হলো, বুশের উত্তরসূরিরাও রাশিয়াকে আমেরিকার অংশীদার হিসেবে দেখার সেই মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণাকে আঁকড়ে ধরে থেকেছেন, ক্রমবর্ধমান প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও।
বারাক ওবামা মস্কোর সঙ্গে “রিসেট” নীতি নিতে চেয়েছিলেন, অথচ তখনই পুতিন প্লেন, ট্যাঙ্ক ও সেনা পাঠিয়ে জর্জিয়ায় আগ্রাসন চালিয়েছিলেন। এক কুখ্যাত রাষ্ট্রপতি বিতর্কে, তিনি রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনিকে কটাক্ষ করেছিলেন রাশিয়াকে ভূ-রাজনৈতিক হুমকি বলার জন্য।
ওবামার যুক্তি ছিল পুরোপুরি ঠাট্টা-মশকরা ভরা:
১৯৮০-এর দশক এখন ফোন করছে, তারা তাদের পররাষ্ট্রনীতি ফেরত চায় কারণ ঠান্ডা যুদ্ধ তো ২০ বছর আগে শেষ হয়েছে।
ওবামা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু বিতর্কে নিঃসন্দেহে রমনিই জিতেছিলেন: চার বছর পর রাশিয়া সরাসরি এক মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। জো বাইডেন প্রশাসনের কয়েক মাস পার হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র ক্রেমলিনের সঙ্গে সমন্বয় চালাচ্ছিল স্বাধীন দেশগুলো—যেমন কিরগিজস্তান—নিয়ে, যেন সেগুলো এখনও রাশিয়ার উপনিবেশ। অথচ এর আগেই রাশিয়া সাম্রাজ্যবাদী উত্তরাধিকারের অজুহাত দেখিয়ে পূর্ব ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে এবং ক্রিমিয়া দখল করেছে।
আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসঙ্গ তো তুলিই না।
যে দিন থেকে ভ্লাদিমির পুতিন কেজিবিতে যোগ দেন, তার মিশন—সোভিয়েত-রুশ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখা ও বিস্তৃত করা—অপরিবর্তিত থেকেছে, যদিও পরিস্থিতি পাল্টেছে। ৯/১১-এর ট্র্যাজেডি পুতিনকে সুযোগ করে দিয়েছিল। ২০০১-এর পর পশ্চিমা বিশ্বে রাজনৈতিক পুঁজি ও আত্মতুষ্টি তিনি গড়ে তোলেন। তারপর সেগুলো কাজে লাগিয়ে জর্জিয়া, সিরিয়া, ইউক্রেন, এমনকি আমেরিকার ভেতরেই দুঃসাহসী অভিযান চালিয়েছেন।
আগামী বছর ৯/১১ হামলার এক-চতুর্থাংশ শতাব্দী পূর্ণ হবে, অথচ আজও কোটি কোটি মানুষ ভুগছে রুশ আগ্রাসনের কারণে—যা আমেরিকার কৌশলগত অন্ধত্বে সম্ভব হয়েছিল। এখন একমাত্র সংশোধনের উপায় হলো এই ধারা চিনে নেওয়া।
THIS ARTICLE WAS TRANSLATED FROM thenextmove.org written by Grandmaster and Chess World Champion Garry Kasparov.
Comments